গল্পগুলো অল্প সময় ঘর পাতায়

১.২..৩…৪…. চোখ খুলবো?
একটা আঙুল একটু ফাঁকা করে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে মুন্নী। লাভ নেই। সামনে তো দেয়াল! মুন্নী যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা ওর ঘর। মুন্নীর বয়স যখন বছর ৪ তখন ওদের বাড়ি নতুন করে রং করানোর সিদ্ধান্ত নেন মুন্নীর দাদা। একমাত্র নাতনি এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে মুন্নীর মতামত দাদার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুন্নীকে মুন্নীর দাদা একদিন গল্প শোনানোর সময় জিজ্ঞেস করেন, ‘দাদুভাই তোমার প্রিয় রং কী?’ মুন্নী বেচারি আর কত কি বা বোঝে। ও হুট করে বলে দিলো, ‘পেয়ারার রং দাদু’।

মুন্নীর দাদু তো মহাবিপাকে। পেয়ারার রং মিস্ত্রীকে বোঝানো তো মহা মুশকিলের কাজ। তার উপর পেয়ারার আবার রং পাল্টায় তার জীবদ্দশায় তিনবার।যাই হোক পরে অবশ্য মুন্নীকে একুরিয়ামের লোভ দেখিয়ে ওর পুরো ঘর মাছেদের ঘোরাঘুরির আদলে রং করে দেয়া হয়েছে।মুন্নী এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই বরাবর মাছের চোখটা। মুন্নী চোখ খুলতেই মুন্নীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মাছ। মুন্নীর গুনতি শেষ হয়নি।

৫…..৬……
ওপাশ থেকে সাড়া দেয় একজন, ‘এবার খোল’। মুন্নী এপাশ ওপাশ ফিরে খুঁজতে থাকে বিহানকে। বিহান ওর মামার ছেলে। মুন্নীর একমাত্র খেলার সাথী তাও বছরে ১ মাসের জন্য। স্কুল ছুটির সময়টায় আর কি।মুন্নী নিজের ঘরজুড়ে পুরোটা ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে মুন্নীর সাথে দেখা হচ্ছে কখনো গোল্ড ফিশের,কখনো ডলফিন কিংবা কখনো ঝিনুকের।খাটের তলায় উঁকি দিতেই মুন্নীর চোখ ছানাবড়া। একি! একটা জ্যান্ত মাছ পড়ে আছে খাটের তলায়। একুরিয়াম থেকে মাছ লাফ দিলো খাটের তলায়? মুন্নীকে ছুটে যায় মায়ের কাছে।
……..
মুন্নীর গায়ে ধাক্কা লাগে মেয়ের দৌড়ে আসার ধাক্কায়। আজকের মুন্নী একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। তারও মেয়ে হয়ে গেছে ঠিক ৪ বছর বয়সের। ট্যাংরা মাছের ঝোল রাঁধতে রাঁধতে মুন্নীর মনে পড়ে তার রঙিন শৈশব।মানুষ তার শৈশব কাটায় দুইবার। একবার নিজের যাপিত জীবনের মধ্যে দিয়ে,আরেকবার তার সন্তানের শৈশবে। মাঝখানে গল্পগুলো অল্প সময় ঘর পাতায়!

About The Author

Leave a Reply

Related Posts