চুন রংয়ের দেয়ালে রঙিন দেয়ালঘড়ি

ঠিক কত বছর আগে বাসার দেয়ালে চুনকাম করা হয়েছে কেউ বলতে পারবেন? আমি নিজেও ঠিক মনে করতে পারছি না। বুঝলাম,অনেকদিন হলো কোন গ্রামে ঘুরতে যাই না।
চুনকাম ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। আমার এখনো মনে পড়ে,বাড়িতে যখন চুনকাম করা হতো উৎসব পার্বণে কিংবা বছর বছর তখন কি ধুমটাই না লাগতো। মিস্ত্রিরা আসতেন,মুখে গামছা বেঁধে দেয়ালে চুন লাগাতেন। গামছা মূলত আমাদের বাংলার চিরায়ত মাস্ক। গন্ধ লাগে? গামছা দিয়ে মুখ ঢাকো। মৌমাছির চাক ভাঙবেন? গামছা দিয়ে মুখ ঢাকুন।মানে এই এক জিনিস।

তো চুনকাম শেষ হলে মানুষের বাড়িতে একটা গ্যাস থাকে দীর্ঘদিন।সেই গ্যাসে না মশা আসে না মাছি। একদিকে ভালোই আবার একদিকে খারাপও। তখন তো বুঝতাম না এতোকিছু।আমাদের একটা কফি কালারের ঘড়ি আছে। চুনকাম শেষ হবার দুদিন পর ঘরের সব মালামাল আবার সাজানো হতো। আমার কাজ ছিলো এই ঘড়িটা দেয়ালে সেট করা। আমার নিজের সাইজ ৪ ফুট আর ঘড়ির পেরেক ৮ ফুট উচ্চতায়। মানে এটাকে দুঃসাহস বলে অথবা অন্য কিছু আমি ঠিক জানি না।সোফার উপর টুল দিয়ে তার উপর ছোট চকি দিয়ে নড়তে নড়তে ভয়ে ভয়ে উঠতাম। তাও ঘড়ি আমারই সেট করা লাগবে।ঘড়ি সেট হওয়ার পর আমার প্রথম কাজ ছিলো মেপে দেখা যে সোজা হয়েছে কি না। একটু বাঁকানো থাকলেই খটকা লাগতো। আবার উঠে ঠিক করা লাগবে। তাও করতাম।

কেননা,সময়ের হিসেবটাই সোজা। আমার জীবনেও সময় পেরিয়ে গেছে বহু কিন্তু চুন রংয়ের দেয়ালে কফি রংয়ের রঙিন দেয়ালঘড়িই বোধ হয় আমার জীবনে এস্থেটিকের প্রথম নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে।

About The Author

Leave a Reply

Related Posts