লোডশেডিং এর সন্ধ্যায় কালবৈশাখী

‘বন্ধু তুমি ঝড়ের দিনে আমের মতো না, দমকা হাওয়া আসে বন্ধু তুমি আসো না’
এলিফ্যান্ট রোডের কাছাকাছি আছি বোধ হয়। প্রচন্ড রোদ লাগছে। তাও কখন যে বাসের মধ্যে একটু চোখ লেগে গেছে টের পাইনি। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। বৈশাখ মাসের গরম ব্যাপারটা অদ্ভুত। সেইযে প্রথম দিন একে এতো তোড়জোড় করে আমন্ত্রণ করা হয় এরপর থেকে সূর্য বেশ খুশি হয়ে হাসতে থাকে আর আমরা ভুগি গরমে। তাও মাসের রাজা বৈশাখ!
যাই হোক ছিলাম এলিফ্যান্ট রোডে। সিডি’র দোকানে গান এর দুইটা লাইন শুনেই চোখ খুলে গেলো।

আচ্ছা তিন শব্দে বৈশাখের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে কি কি মাথায় আসে? আমার আসে, আম-কাঁঠাল, ছুটি আর কালবৈশাখী!
আমরা যারা ৯০ দশকের দিকে বড় হয়েছি আমরাই বোধ হয় শেষ প্রজন্ম যাদের কাছে ঝড় আর আম কুড়ানো রীতিমতো উৎসব। ঝড়ের যে আলাদা গন্ধ আছে তা আমরা জানি, অনুভব করি।
গান শুনতে শুনতে আবারো চোখ বন্ধ করি। ফিরে যাই নিজের বাড়ির পেছনের দিকে।
বিকেল বেলা আকাশের রঙ দেখে মা বলে দিলেন ঝড় আসবে। বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হয় ঠিক সন্ধ্যার পরপর। লোডশেডিং শুরু হয় নিয়ম করে। উনারাও বোধ হয় আম কুড়াতে যাবেন তাই সবার কারেন্টের সুইচ অফ করে দিয়ে যান। কারেন্ট গেলো। শুরু হলো মেঘেদের ডাকাডাকি। বন্ধুরা যেমন বাড়ির সামনে এসে নাম ধরে ডাকে ঠিক তেমন করেই মেঘেরাও ডাকে। আমি আর সব ভাই বোনেরা গামছা, ঝুড়ি রেডি করছি। বাড়ির সামনের সুপারি আর নারিকেল গাছের পাতাগুলো প্রথম বাতাস দেয়। এইতো চলে এসেছে তুফান সাহেব। মা হারিকেন নিয়ে ঘরের মেঝেতে রাখলেন। জানালাগুলো বন্ধ। খুলে গেলো বারান্দার গেট। বেরিয়ে পড়লাম আমরা। তখন বজ্রপাতে এতো মৃত্যুর খবর আসতো না। বড় বড় বাজগুলো সামলে নিতো আমার সাইজের ৫ গুণ বড় নারিকেল আর কড়ই গাছ। এক দৌড়ে বাড়ির পেছন দিকে আমরা। টিনের চালে ধুমধাম আওয়াজ হচ্ছে। শেয়ারিং এর কনসেপ্ট মাথায় থাকলেও একটা সুপ্ত কম্পিটিশন তো ছিলোই কে কত বেশি আম কুড়োলো।
জিগাতলা নামেন….
ধুর! নামতে হবে বাস থেকে…
কি হতো যদি আরেকটু থাকতো স্বপ্নটা? কি হতো যদি এমন ক্রেডিটের ইনস্টলমেন্টে স্বপ্নটা না দেখতে হতো? এই পিচের রঙচটা শহরে শৈশবের রঙিন স্বপ্নই তো আমাকে দুদন্ড শান্তি দেয়…

About The Author

Leave a Reply

Related Posts

No Related Post