সাদা কালো স্মৃতিতে রঙিন সময়

‘ফুলের টবটা আস্তে নামান। আর ওইদিকে দেখেন ছোট টেবিলটা ওইটা আগে নামিয়ে নেন।’

সদ্য বিয়ে হওয়া প্রৌঢ়া সেঁজুতি আর রাতুল একটা মিনি ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছে বাসা শিফটিং করার লোকেদের। রাতুলের প্রাইভেট চাকরি। মাত্রই বেচারা কোম্পানি চেঞ্জ করেছে। ফলাফল, অফিস লোকেশন চেঞ্জ, বাসাও চেঞ্জ। একে একে লোকেরা জিনিসগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে ঘরে দিয়ে আসে। বিকেল হয়ে যায় এসব সারতে সারতেই।

‘১, ২, ৩, ৪টা বড় লাইট। আর বাথরুমের জন্য ৪ ওয়াটের লাইট আনলেই তো হবে না?’ রাতুল জিজ্ঞেস করে সেঁজুতিকে।
ড্রইংরুম থেকে সেঁজুতি বলে,‘আমার নাম রাবিতা… ভালোবাসি কবিতা…’
রাতুল,‘হ্যাঁ?’
সেঁজুতি হো হো করে হাসতে থাকে। রাতুল দৌড়ে যায় পাশের ঘরে। নতুন বউ,নতুন বাসা আবার জ্বিন ভূত ধরলো না তো এই ভেবে রাতুল অস্থির।

পাশের ঘরে গিয়েই রাতুল দেখে ড্রইংরুমের বড় দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে সেঁজুতি। বড় দেয়ালটা জুড়ে নানান কিছু লেখা, আঁকা। সেঁজুতি সব খুঁটে খুঁটে পড়ছে সেগুলো। রাতুল নিজেও গিয়ে দেখে এক জায়গায় লেখা,‘ইকিরিমিকিরি ঝিকিরি…ফুড়ুং ফাড়ুং টিকিরি…’ লেখা দেখেই বোঝা যায় জীবনের প্রথম শেখা অক্ষরগুলো কেউ একজন এখানে হোমওয়ার্ক করেছে।


সেঁজুতি,‘আচ্ছা শোনো। বাড়িওয়ালা রঙ করবে কবে বলেছে?’
রাতুল,‘বললো তো সামনেরে সপ্তাহেই। আমরা নিজেদের পছন্দের রঙ বলে দিতে উনাকে।’
সেঁজুতি,‘আমরা সব দেয়াল রঙ করবো এটা শুধু এমনই থাক? মানুষের স্মৃতি দেখতেও ভাল্লাগে তাই না বলো? এট লিস্ট সাদা কালো স্মৃতি আমাদের সময়টা রঙিন করে রাখবে।’
রাতুল,‘তাহলে আমাদের জন কোথায় লিখবে?’


সেঁজুতি মুচকি হেসে রাতুলের দিকে নিজের ব্যাগটা টেনে নেয়। ব্যাগ থেকে মার্কার বের করে। দেয়ালে একটা বানর সদৃশ কিছু আঁকা ছিলো তার পাশে সেঁজুতি বড় করে লিখে দেয়, আমার নাম রাতুল,আমি তার বউ; ছোট্ট একটা পুতুল…

About The Author

Leave a Reply

Related Posts