গন্ধ গুলো সত্যিই থেকে যায়।

এইতো আরেকটু গেলেই নানুবাড়ি। নানুবাড়ি যাওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি আমার ভালো লাগতো ভ্যানের রাস্তাটুকু। আমার বয়স তখন ৭-৮ হবে। একবার ভ্যানে উঠলাম আর সবাই আম্মুকে দেখে সে কি খুশি! আমাকে ধরে ধরে সবাই আদর করলো। সম্পর্কে সবাই আমার মামা/নানা,তাই চিপস্,চকোলেট আরো এটা সেটা কত কী খাওয়াতে লাগলো।


একটা সময় ছিলো ডিসেম্বর মানেই আমরা নানুবাড়িতে। সেই নানুবাড়ি এলাম আজ ঠিক ১১ বছর পর।
এখন আর ভ্যানগুলো নেই। নিজেরও বয়স বেড়ে গেছে বিধায় এলাকার মামা নানু গোত্রীয় যারা ছিলেন তারা সালামটুকু নেন কিন্তু চিনতে পারেন না ঠিকঠাক। অনেকে তো চলেই গেছেন ওইপাড়ে।

নানুবাড়িতে ঢুকতে গেলেই মাধবীলতার ডালগুলো গেটের হাওয়ায় নড়ে ওঠে। একটা দুটো লতা আছড়ে এসে মুখে পড়ে। নানুবাড়ির জায়গা অনেক বড়। মেঝো মামা দেশের বাইরে যাওয়ার পর একপাশে ৩ তলা বিল্ডিং উঠেছে তবু নানুবাড়ির মূল ঘর ভাঙা হয়নি। দুপুরবেলা এসেছি বিধায় মামাতো ভাই বোনেরা সব বোধ হয় ঘরেই।

আমি নিরিবিলি গিয়ে বসলাম নানুর ঘরের সামনে। রোদ পড়েছে বেশ। এই ঘরটা কি যেন একটা অদ্ভুত কারণে সবসময় ঠান্ডা থাকে। শীত গ্রীষ্ম বারো মাস একই রকম তাপমাত্রা। আমার বন্ধু আর্কিটেক্ট মামুনকে একবার বলেছিলাম পরে ও বলছিলো ওর একবার এসে দেখা লাগবে।
নানুর ঘরের দরজা খোলা। মামী বোধ হয় মাত্রই ছাদে গেছে বা কলতলায়। ঘরটায় ঢুকতেই একটা পুরোনো গন্ধ আমার চোখ বন্ধ করে দিলো। মানুষ কি অদ্ভুত তাই না? সব ছেড়ে যায় এমনকি তার গন্ধটুকুও নিতে পারে না সাথে।

বিছানা সেই আগের মতোই আছে। আমার মনে আছে নানু যেদিন মারা গেলো আম্মা বিছানায় ঠায় বসে ছিলো দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে। বড় মামা আজো প্রতিদিন এই ঘরে এসে একবার নামাজ পড়ে। নানু বিছানায় বসে দেয়ালের যেখানটায় মাথা রাখতেন সেখানটায় দাগ আছে এখনো। মামা পুরো ঘর একবারই নতুন করে রঙ করিয়েছেন কিন্তু জানালার পাশে, বিছানার দিকে করাননি। মায়া ব্যাপারটা বোধ হয় এমনই; আমরা যতই আকড়ে ধরি ততই নিজেরা কুকড়ে যাই…

About The Author

Leave a Reply

Related Posts